হাওজা নিউজ এজেন্সি: আজ সকালে আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ী তেহরানে বিভিন্ন ক্রীড়া চ্যাম্পিয়ন এবং আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান অলিম্পিয়াড বিজয়ীদের সঙ্গে সাক্ষাৎকালে এই মন্তব্য করেন।
যুক্তরাষ্ট্রের অহংকারের প্রতি তীব্র সমালোচনা
আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের উদ্দেশ্যে আরও বলেন, “আপনি কে, যে অন্য দেশের পরমাণু শিল্প নিয়ে নির্দেশনা দেবেন?” তিনি মার্কিন প্রেসিডেন্টের হিংসাত্মক ও ভিত্তিহীন রটনা নিন্দা জানিয়ে বলেন, তার এই আচরণের উদ্দেশ্য ইজরায়েলিদের মনোবল বাড়ানো এবং মিথ্যা তথ্যের মাধ্যমে নিজেকে শক্তিশালী দেখানো। তিনি যোগ করেন, “যদি তিনি সত্যিই শক্তিশালী হন, তবে লাখ লাখ মার্কিন নাগরিক যারা তাঁর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করছে তাদেরকে শান্ত করুক।”
আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ী বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের দাবি যে তারা ইরানের পরমাণু শিল্প ধ্বংস করেছে, তা ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের হতাশা প্রশমিত করার জন্য বলা হয়েছে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের কোনো অধিকার নেই অন্য দেশের পরমাণু সক্ষমতা নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার। এছাড়া তিনি নিশ্চিত করেছেন, ইরানের পরমাণু কর্মসূচি শুধুমাত্র শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে, বিশেষ করে চিকিৎসা ও শক্তির জন্য পরিচালিত হচ্ছে।
তিনি বলেন, আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ইহুদিবাদী ইসরায়েলে গিয়ে একগাদা ফাঁকা বুলি আর হাস্যকর আচরণের মাধ্যমে হতাশাগ্রস্ত জায়নিস্টদের আশাবাদী করতে চেয়েছেন। আমার বিশ্লেষণ হলো—এই সফরের উদ্দেশ্যই ছিল তাদের মনোবল ফিরিয়ে দেওয়া।
আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ী বলেন, ১২ দিনের যুদ্ধে জায়নিস্টরা এমনভাবে চপেটাঘাত খেয়েছে যা তারা কল্পনাও করেনি, প্রত্যাশাও করেনি—তারা হতাশ হয়ে পড়েছিল। তাই আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ইহুদিবাদী ইসরায়েলে গিয়ে তাদেরকে সেই হতাশা থেকে টেনে বের করার চেষ্টা করেছেন।
ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র প্রসঙ্গে তিনি বলেন, জায়নিস্টরা কখনো ভাবেনি ইরানি তরুণদের বানানো ক্ষেপণাস্ত্র তাদের নিজেদের আগুন ও শিখায় ইহুদিবাদী ইসরায়েলের কিছু সংবেদনশীল গবেষণা কেন্দ্রের গভীরে পৌঁছে সেগুলোকে ছাই করে দিতে পারবে—কিন্তু সেটাই ঘটেছে।
গাজা যুদ্ধ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, গাজার যুদ্ধে অপরাধের প্রধান অংশীদার আমেরিকা- এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। যুক্তরাষ্ট্র বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও সরঞ্জাম দখলদার ইসরায়েলের হাতে তুলে দিয়েছে, যাতে তা গাজার নিরস্ত্র জনগণের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হয়। আমেরিকা এই অপরাধের অংশীদার। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট দাবি করছেন, তারা সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করছেন। গাজায় তাদের হামলায় বিশ হাজারের বেশি শিশু ও নবজাতক শহীদ হয়েছে—ওরা কি সন্ত্রাসী ছিল? চার-পাঁচ বছরের শিশু, নবজাতক—এরকম বিশ হাজার শিশুকে তোমরা হত্যা করেছ! এরা কি সন্ত্রাসী ছিল? না, তোমরাই সন্ত্রাসী!
আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ী বলেন, তোমরা আমরিকাই প্রকৃত সন্ত্রাসী, তোমরাই আইএস (দায়েশ) সৃষ্টি করেছ এবং তা পশ্চিম এশিয়ার ওপর চাপিয়ে দিয়েছ, এখনো তাদেরকে নিজেদের কাছে রেখে দিয়েছ যাতে যেকোনো সময় নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করতে পারো। এখনও আইএস'র কিছু সদস্য আমেরিকার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে; তাদের কোথাও রেখে দিয়েছে যাতে প্রয়োজনে যেকোনো সময় যেকোনো জায়গায় ব্যবহার করা যায়।
ইরানের যুবসমাজের সাফল্য ও জাতির আশা
বিভিন্ন ক্রীড়া চ্যাম্পিয়ন এবং আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান অলিম্পিয়াড বিজয়ীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, এই সফল তরুণরা প্রমাণ করেছেন যে ইরানের আশাবাদী যুবসমাজ “শক্তিশালী, শীর্ষে দাঁড়াতে সক্ষম এবং ইরানের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের দিকে বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারে।”
মেডেল বিজয়ীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, বর্তমান ‘সফট ওয়ার’-এর যুগে এই অর্জনগুলি বিশেষ গুরুত্ব বহন করে, যেখানে শত্রু ইরানিদের মধ্যে হতাশা ও নীরাশা ছড়াতে চেষ্টা করছে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, “আপনারা প্রমাণ করেছেন যে ইরানের আশাবাদী যুবকরা, জাতির প্রতীক হিসেবে, বিশ্বের শীর্ষে দাঁড়াতে এবং ইরানের উজ্জ্বল দৃষ্টিভঙ্গির প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম।”
আশা ও আত্মবিশ্বাসের বার্তা
আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ী ইরানের যুবসমাজের প্রতি আশাবাদ প্রকাশ করে বলেন, “ইরানের যুবকরা জাতির প্রতীক। দৃঢ় সংকল্প ও প্রচেষ্টার মাধ্যমে তারা বিশ্বের শীর্ষে পৌঁছাতে পারবে এবং পৌঁছাবেই।” তিনি উল্লেখ করেন, শত্রু মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধের মাধ্যমে জাতিকে হতাশ ও নিজের সক্ষমতা ভুলে যেতে চাইছে, কিন্তু ইরানিরা তা প্রতিহত করতে সক্ষম।
তিনি বলেন, ইরানের যুবসমাজের মধ্যে হতাশা থাকার যে দাবিগুলি করা হচ্ছে, তা ভিত্তিহীন, এবং এই যুবসমাজই জাতির ভবিষ্যতের উজ্জ্বল দৃষ্টিভঙ্গির প্রতীক।
আপনার কমেন্ট